বারমাসি তরমুজ চাষে ভাণ্ডারিয়ার কৃষক আবু বকরের সাফল্য

বারমাসি তরমুজ চাষে ভাণ্ডারিয়ার কৃষক আবু বকরের সাফল্য

পিরোজপুরের ভাণ্ডারিয়ার সফল কৃষক আবু বকর। ব্যতিক্রমী হাইব্রিড জাতের বারমাসি তরমুজ চাষ করে এলাকায় আলোড়ন সৃষ্টি করেছেন তিনি। তার তরমুজ আবাদে উদ্বুদ্ধ হয়ে এলাকার কৃষকরা এখন ঝুঁকছেন বারমাসি তরমুজ আবাদে। আবু বকর কৃষিতে জাতীয় পুরস্কারপ্রাপ্ত একজন শিক্ষিত কৃষক। তিনি উপকূলে একজন সফল কৃষকের দৃষ্টান্ত । তাকে অনুসরন করে এলাকার বহু কৃষক আজ কৃষিতে স্বাবলম্বী। এবার সফল কৃষক আবু বকর কান্দি বেড় ও মাচায় বারমাসি তরমুজ আবাদ করে এলাকায় নতুক চমক সৃষ্টি করেছেন।

স্থানীয়দের সূত্রে জানা গেছে, পিরোজপুরের ভাণ্ডারিয়া উপজেলার মাটিভাঙ্গা গ্রামের শিক্ষিত কৃষক আবু বকর। পেশায় তিনি একজন শিক্ষক। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতকোত্তর ডিগ্রী অর্জন করে স্থানীয় মোন্তাজিয়া দাখিল মাদ্রাসায় সহকারী শিক্ষক পদে চাকরি নেন তিনি। শিক্ষকের সামন্য বেতনে যখন সংসার চলছিল না ঠিক তখন তিনি অবসর সময়ে কৃষি কাজ বেছে নেন। ইতিমধ্যে আবু বকর তার বাড়ির কাছের পতিত জমিতে মাল্টা, আখ, কলা, লাউ, মিষ্টি কুমরা, করলা বরবটিসহ বিভিন্ন জাতের সবজি চাষ শুরু করেন। কৃষিতে বালাই দমনে তিনি আলোক ফাঁদ ব্যবহার করে কীটনাশক বিহীন বিষমুক্ত সবজি চাষ করেন। এলাকায় বিষমুক্ত সবজির কারিগর আবু বকর একজন সমাদৃত সফল কৃষক। কৃষিতে একের পর এক সাফল্য অর্জনে তিনি এখন নিবেদিত এক কৃষিপ্রাণ। ২০১৭ সালে তিনি একজন মডেল কৃষক হিসেবে বঙ্গবন্ধু কৃষি জাতীয় পুরস্কার লাভ করেন।

এবার তিনি দক্ষিণ পূর্ব ভাণ্ডারিয়া মহল্লায় প্রায় এক একর জমিতে হাইব্রিড ব্লাক বেবি, ব্লাক বক্স, ব্লাক প্রিন্স, জেসমিন ১,২ ও ৩ জাতের বারমাসি তরমুজের চাষ করেন। এলাকায় কৃষি সম্প্রসারণে আবু বকর এখন এক দৃষ্টান্ত।

সফল কৃষক আবু বকর জানান, এ জাতের তরমুজ চাষে প্রচুর লাভ। তরমুজ মৌসুম শেষ হওয়ার পর মে থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত মাটির ঢিবি তৈরি করে পলিথিন দিয়ে ঢেকে দিয়ে এবং মাচা তৈরি করে এ তরমুজের চাষ করা যায়। মাত্র ৫৫-৬০ দিনেই এক একটি তরমুজ প্রায় আড়াই থেকে তিন কেজি ওজনের হয়। 

তিনি জানান, এ তরমুজ বিক্রি করে বিঘা প্রতি জমিতে মাত্র দুই মাসে এক লাখ টাকা আয় করা সম্ভব। বেকার যুবকদের জন্য এটা একটা নতুন বার্তা । তারা এ চাষে এগিয়ে এলে তাদের হতাশার দিন শেষ হবে।

আবু বকর বলেন, তার কৃষি কাজে আগ্রহ দেখে সাবেক সাংসদ তাসমিমা হোসেন তার বাড়ির কাছে পতিত ৩ একর জমি তাকে চাষ করতে দেন। পাশাপাশি তাকে সার-বীজসহ সার্বিক সহায়তা দেন। ওই জমি মাত্র দুই মাসের ব্যবধানে তার তরমুজের খামারটি কানায় কানায় পরিপূর্ণ হয়ে যায়। বর্তমান বাজার দর অনুযায়ী সকল খরচ বাদ দিয়ে ওই তরমুজ বিক্রি করলে এক লাখ টাকা তিনি আয় করতে পারবেন।

তিনি আরও জানান, তার এই চাষাবাদ দেখে স্থানীয় কয়েকজন কৃষক এই চাষে আগ্রহ প্রকাশ করেছেন। কৃষি আমাদের অর্থনীতির নিয়ামক। কৃষিকে কেন্দ্রে রেখেই আমাদের সম্ভাবনার দিকে এগিয়ে যেতে হবে।

এ বিষয়ে ভাণ্ডারিয়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, আবু বকর একজন শিক্ষিত সফল কৃষক। সে এলাকার কৃষি বিপ্লবের অনন্য নায়কও। তাকে বহু কৃষক অনুসরন করছে। গ্রীষ্মকালীন তরমুজ চাষে সে সফলতা পেয়েছেন। বিঘা প্রতি ১৫০/১৬০ মন তরমুজ ফলনের আশা। আবু বকরের তরমুজ খামারের কাছে অন্য কৃষদের নিয়ে সমাবেশ করে এ চাষে উদ্ধুদ্ধ করা হবে। আবু বকরের এ চাষ দেখে এলাকায় তরমুজ চাষে নতুন সম্ভাবনার সৃষ্টি হবে।