সেই ছোটবেলা থেকে শুনে আসছি বাংলাদেশ কৃষি প্রধান দেশ। দেশের সিংহভাগ আয় এ কৃষি কাজের মাধ্যমেই উঠে আসে। সেই হিসেবে কৃষকদের এই দেশে সবচেয়ে বেশি মূল্যায়ন করার কথা ছিল। কিন্তু তার পরিবর্তে কৃষকদের বরাবরই অবহেলার শিকার হতে হয়।

শুধুমাত্র সরকারের সঠিক তত্ত্বাবধানের অভাবে যখন মাথার ঘাম পায়ে ফেলে ফসল উৎপাদনের পর ফসলের ন্যায্য মূল্য না মেলে, তখন কৃষকদের বেঁচে থাকাটাই কষ্টকর হয়ে যায়। রোদে পুড়ে, বৃষ্টিতে ভিজে, মাসের পর মাস খেটে তারা মানুষের জন্য খাবারের ব্যবস্থা করে। কিন্তু বিনিময়ে নিজেদের খাবার টাও মেলে না!

এ বছরেও ধানের প্রচুর ফলন হয়েছে। দেশের সকল মাঠ জুড়ে শুধু ধান আর ধান। ধানের গন্ধে চারিদিক ভরে গেছে। অধিক ফলনের এই খুশি প্রতিটি কৃষকের ঘরে ঘরে ছড়িয়ে যাওয়ার বদলে তাদের উৎকন্ঠার মধ্যে দিন পার করতে হচ্ছে। কারণ মিলছেনা ন্যায্য দাম।

একমণ ধানের দাম মাত্র ৫০০-৫৫০ টাকা। এত অল্প দাম হওয়ায় তারা আজ শুধুই হায় হায় করছে। অথচ এই চালের দামও বাজারে আকাশ ছোঁয়া। তারপরও বিভিন্ন সিন্ডিকেটের কারণে চাষীদের জীবন মানের কোন পরিবর্তন হচ্ছে না। অথচ সরকারের একটু সদিচ্ছাই পারে তাদের এ করুন অবস্থা থেকে মুক্তি দিতে।

চাষীরা সারা বছর কষ্ট করে যদি দু বেলা দু মুঠো খেতেই না পারে তাহলে তাদের জীবন চলবে কিভাবে? ফসল ফলানোর পরে যদি লাভের বদলে উল্টো ক্ষতির মুখে পরে তাহলে কিসের আশায় তারা ফসল ফলাবে। এমনিতেও লোকসানের কারণে অনেক কৃষক এ পেশা থেকে সরে এসেছে।

এদিকে পাল্লা দিয়ে কমছে কৃষি জমির পরিমাণ। এ রকম চলতে থাকলে এক সময় আর এ কৃষকদের খুঁজে পাওয়া যাবে না। এমনিতেও দেশের বাইরে থেকে প্রচুর পরিমাণ কৃষি পণ্য আমদানি করতে হয়। এর পরিমাণও দিনদিন বেড়েই চলছে। অন্য দেশ থেকে যদি অধিক দামে পণ্য কিনতে পারি, তবে সেই একই পণ্যের দামের অভাবে আমার দেশের কৃষক কেনো না খেয়ে থাকবে? কৃষকদেরকে জিম্মি করে অনেক অসাধু ব্যবসায়ী রাতারাতি অঢেল টাকার মালিক হয়েছে এরকম নজির অসংখ্য। কিন্তু কৃষকদের নিয়ে ভাবার লোকের বড়ই অভাব। পত্রিকার পাতা খুললে যখন দেখি অভাবের তাড়নায় এই কৃষকেরা আত্মহত্যার মতো পথ বেছে নেন, তখন বিবেকের দংশনে অস্থির হয়ে যাই।

অথচ এ কৃষকের হাতেই নাকি সোনা ফলে। কাজেই সরকারের প্রতি অনুরোধ কৃষদের বাঁচতে দিন। সঠিক মনিটরিংয়ের মাধ্যমে কৃষকদের ঘামের যথাযথ মূল্যের ব্যবস্থা করুন। কৃষক বাঁচলেই দেশ বাঁচবে। দেশের কৃষকরা আজ কাঁদছে। তাদের চোখের পানিগুলো মুছে দিন।

লেখক: ফুয়াদ খন্দকার, লেখক ও সামাজিক কর্মী