আধুনিক কৃষিকে যিনি লালন করে ভাগ্যের চাকা সচল করেছেন

আধুনিক কৃষিকে যিনি লালন করে ভাগ্যের চাকা সচল করেছেন

                     

 আধুনিক কৃষিকে যিনি লালন করে ভাগ্যের চাকা সচল করেছেন                          

 

জীবন সংগ্রামে যিনি একজন বিদ্ধস্ত নাবিক, দিশেহারা হয়ে ছুটছেন দিক-বিধিক হয়ে, সংসারের গ্লানি ও ব্যর্থতা নিয়ে বেঁচে থাকার আশার প্রদীপ প্রায় ফুরিয়ে আসছিলো কারন তার যেটুকু জমি আছে তা দিয়ে ০৩ জন ছেলে- মেয়েসহ পরিবার নিয়ে ভালোভাবে দুমুঠো অন্ন জোগাতে পারত না ঠিক তখনই সংশ্লিষ্ট ব্লকের উপসহকারী কৃষি অফিসার জনাব প্রবীর কুমার আচর্য্য উচ্চমূল্যের ফসল উৎপাদন চাষ সম্পর্কে অবহিত করেন এবং তাকে আয় ব্যয়ের হিসাব দেখিয়ে ফল চাষ সম্পর্কে উদ্বুদ্ধ করলে তিনি ফল চাষ করতে আগ্রহ প্রকাশ করেন। তিনি একজন সাদামাটা কৃষক ছাড়া কেউ নন, তিনি হচ্ছেন রাজবাড়ী সদর উপজেলার শহীদওহাবপুর  ইউনিয়নের রুপপুর গ্রামের কৃষক আঃ গফুর কাজী যার বয়স ৫৩ বছর যিনি ৫ম শ্রেণী পর্যন্ত পড়াশুনা করেছেন। তার পরিবারের সদস্য সংখ্যা ৫ জন এবং তার প্রধান পেশা কৃষি। তার ০.২৫ একর বসতবাড়ীতে জমির পাশাপাশি ২.৫০ একর আবাদি জমি আছে যার মধ্যে তিন ফসলী জমির পরিমাণ ১.৬৫ একর। তিনি ২০১৩ খ্রি তারিখে উচ্চমূল্যের ফসল বিশেষ করে মাল্টা ও ড্রাগন ফল চাষের উপর কৃষক প্রশিক্ষণ গ্রহণ করে ৪ বছর যাবত আধুনিক পদ্ধতিতে মাল্টা চাষ সহ বিভিন্ন ফলের উপর চাষ শুরু করেন।

পরবর্তীতে মাল্টা চাষে আগ্রহ প্রকাশ করায় তাকে প্রদর্শনীর জন্য নির্বাচন করা হয়। প্রাথমিক অবস্থায় তিনি আন্ত-ফসল হিসাবে সবজি, হলুদ ও আদা চাষ করে আর্থিকভাবে লাভবান হন।তিনি মাল্টা গাছের নিয়মিত পরিচর্যা করতে থাকেন এবং অভিজ্ঞতা অর্জন করেন। তিনি প্রথম বারে ২০ শতাংশ জমিতে ৭০ কেজি মাল্টা ১০,০০০/- বিক্রি করে ৬,০০০/- আর্থিক ভাবে লাভবান হন এবং পরবর্তী বছর থেকে মাল্টা বাগান হতে ১৬,০০০/- আর্থিক ভাবে লাভবান হন।       

তিনি মাল্টা চাষে সাফল্য পেয়ে ২০১৫ সালে ২০ শতাংশ জমিতে নতুন ৩৭ টি মাল্টার চারা রোপন করেন। এছাড়াও তিনি ভার্মি কম্পোস্ট উৎপাদন, ৮০ টি ড্রাগন ফলের গাছ এবং ১৮ টি ভিয়েতনামী নারিকেলের চারা রোপন সহ বিভিন্ন ফসল আবাদ করেন যেখান থেকে প্রতি বছর প্রাথমিকভাবে গড়ে ৮৫ কেজি ড্রাগন ফল আহরণ করেন।তার এই নতুন জাতের ফল চাষে ও ভার্মিকম্পোস্ট করাতে তিনি এলাকায় অতি সুপরিচিত হয়ে উঠেন  তিনি আশা করছেন ৩ বছরের মধ্যেই তার মাসিক গড় আয় ২৫,০০০/- টাকায় উন্নীত হবে। আয় এবং কৃষি কাজে আত্মবিশ্বাস বাড়ার সুবাদে স্থায়ী কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি, পারিবারিক আয় বৃদ্ধি (প্রতি মাসে সব মিলিয়ে এখন পর্যন্ত ৯,০০০/- টাকা), সহজেই তার ০৩ জন ছেলে-মেয়ের লেখা পড়ার খরচ মেটাতে পারছেন, পরিবারের সদস্যদের ভালোমানের পোশাক দিতে পারছেন, বাংলা নববর্ষ ভালোভাবে পালন করতে পারছেন, সুষম খাদ্য নিয়মিত গ্রহণ করছেন, চিকিৎসা ব্যয় মেটাতে কষ্ট হয় না এবং তার আত্মীয় স্বজনকে নিজের বাগানের ফল দিয়ে সহযোগিতা করছেন। তার এই সফলতা দেখে পরবর্তীতে ৫ জন কৃষক মাল্টা ও ড্রাগন চাষ শুরু করেন এবং অনেকেই ভার্মিকম্পোস্ট করতে শুরু করেছেন। তার এই সফলতায় এবং নতুন নতুন কৃষি প্রযুক্তি গ্রহন করাতে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের একজন কার্যকর সদস্য ও পরামর্শক হিসাবে আমি গর্বিত।