ফসল উৎপাদনে বীজ যত মানসম্মত হয় ফলন ততবেশি হয়, তত ভালো হয়। ভালো মানসম্মত বীজ যতটুকু না উৎপাদন কৌশলের ওপর নির্ভর করে তার চেয়ে বেশি নির্ভর করে যথাযথ পদ্ধতিতে বীজ সংরক্ষণের ওপর। সাধারণভাবে লাগসই পদ্ধতিতে, আধুনিক পদ্ধতিতে বীজ সংরক্ষণ করা যায়। সাধারণ পদ্ধতিতে সংরক্ষিত বীজ মানসম্মত থাকে না। আধুনিক পদ্ধতিতে সংরক্ষণ করলে খরচ বেশি হয়। সেজন্য কম খরচে মানসম্মত বীজ প্রাপ্তির নিশ্চয়তা পাওয়া যায় এমন পদ্ধতিই বিশ্লেষণ করা হবে। আমাদের দেশে সাধারণত মাটির পাত্রে বীজ সংরক্ষণ করা হয়। বিশেষ কিছু কৌশল আর পদ্ধতি অবলম্বন করলে সাধারণ পদ্ধতি অসাধারণ পদ্ধতিতে পরিণত হয়। বীজ মাটির পাত্রে, বোতলে, পটে, টিনে, ড্রামে, প্লাস্টিকের ড্রামে, বস্তায় সংরক্ষণ করা হয়। তবে বীজ পাত্রের পছন্দ নির্ভর করে বীজের পরিমাণ, জাতের ওপর। যেমন- শাকসবজির বীজ হলে বোতলে/পটে, ডাল তেল বীজের জন্য পট বা টিনে আর দানাদার বীজ হলে ড্রাম, মাটির পাত্র, পলিথিনের বস্তায় রাখা যায়। যে কোনো পাত্রেই রাখা হোক না কেন সাধারণ অনুসরণীয় কৌশল হলো বীজপাত্রের তলায় শুকনা/পরিষ্কার/ ঠান্ডা বালি রেখে তার ওপর ১০-১২% আর্দ্রতা সম্পন্ন বীজ রাখতে হবে। বীজ পাত্রের ঠিক মাঝখানে ১/২ খ- শুকনা চুন রাখতে হয়। তারপর বীজ পাত্রের মুখ পর্যন্ত বীজ রেখে তার উপরে বিশকাটালী/ নিম/ নিসিন্দা/ ল্যান্টানা/তামাকের শুকনা পাতার গুঁড়া মুখে রেখে বীজপাত্র বায়ুরোধী করে বন্ধ করে দিতে হবে। এভাবে বীজ পাত্রে বীজ একবছর পর্যন্ত ভালো থাকে। বীজ সংরক্ষণের সাথে সংশ্লিষ্ট আরো কিছু আবশ্যকীয় করণীয় হলো-
. বীজ পাত্র মাটির হলে অগণিত অদৃশ্য ছিদ্রের মাধ্যমে বাতাস মাটির বীজপাত্রের ভেতরে ঢুকে বীজের মান নষ্ট করে দেয়। এ জন্য মাটির বীজপাত্র ভালোভাবে লেপে দিতে হবে। বীজপাত্র প্রলেপ দেয়ার জন্য আলকাতরা, গাবের রস, যে কোনো বাজারি রঙ, রান্নার পুরনো তেল, রেড়ি/ভেরেন্ডা তেল, পাকা বীচিকলার কাথ, কাঁঠালের খোসার কাথ, পাকা বেল এসব দিয়ে মাটির পাত্র লেপে দিয়ে শুকানো বীজ রাখতে হবে। এতে বীজ শতভাগ ভালো এবং বিশুদ্ধ থাকবে।
বীজপাত্রে বীজ যদি কম থাকে তাহলে বিভিন্ন সমস্যা হয়, বীজের মান কমে যায় সেজন্য পারতপক্ষে মুরী, শুকনা পরিষ্কার কাঠের গুঁড়া/ছাই/তুষ দিয়ে বীজপাত্রের খালি অংশ ভরে তারপর বায়ুরোধী করে মুখ বন্ধ করতে হয়। যদি কোনোভাবে বীজপাত্র ভরে দেওয়া সম্ভব না হয় তাহলে খালি জায়গাটিতে একটি মোমবাতি জ্বালিয়ে আস্তে আস্তে বীজপাত্রের ঢাকনা দিয়ে মুখ বন্ধ করে দিতে হবে। এতে খালি জায়গার জীবাণু মরে গিয়ে বীজপাত্রের পরিবেশ বালাইমুক্ত রেখে বীজ মানসম্মত থাকে।
বীজপাত্রে বীজ রাখার কাজ শেষ হলে হয় শিকায় ঝুলিয়ে রাখতে হয় অথবা ওজনে ভারী হলে মাচা করে চাটাই, কাঠের ওপর এমনভাবে রাখতে হবে যেন বীজপাত্র মাটির বা ফ্লোরের সংস্পর্শে না লাগে। এতে মাটির আর্দ্রতায় বীজের কোনো ক্ষতি হয় না।
বীজ সংগ্রহ: মাঠ থেকে জমির সবচেয়ে ভালো ফলন সম্পন্ন অংশ বীজের জন্য নির্বাচন করতে হবে। ৮০ শতাংশের উপর পাকলে বীজ কাটার সময় হয়। রোদ্রউজ্জ্বল দিনে ফসল কেটে পরিষ্কার ভালো স্থানে উপযুক্ত উপকরণে মাচা/টেবিল/গাছের গুড়ি/ড্রাম এসবে আড়াই বাড়ি দিলে যে পরিমাণ বীজ আলাদা হয় সেগুলোই ভালো বীজ হিসেবে সংগ্রহ করতে হবে। আড়াই বাড়ির পর যেসব দানা ফসলের কান্ডের সাথে লেগে থাকে সেগুলো গরু/মহিষ বা পায়ে মুড়িয়ে আলাদা করে খাওয়ার জন্য রাখা যায়। এরপর ভালোভাবে রোদে শুকিয়ে, নিখুঁতভাবে পরিষ্কার করে নিতে হবে। বীজ শুকানো হলো কিনা তার লাগসই পরীক্ষা হলো দাঁতের মধ্যে দিয়ে চাপ দিলে কটকট আওয়াজ করলে বা ধানের বীজ ডানহাতের বৃদ্ধ ও তর্জনীর মধ্যে দিয়ে কানের কাছে নিয়ে চাপ দিলে কট করে আওয়াজ হয়। এতে বুঝতে হবে ধানের আর্দ্রতা সংরক্ষণের পর্যায়ে এসেছে। তারপর শুকিয়ে ঠান্ডা করে উপযুক্ত পাত্রে সংরক্ষণ করতে হয়। মোটকথা বীজের জন্য সবকিছু আলাদা বিশেষত্ব অতিরিক্ত সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে।